খ্রিষ্টধর্ম শিক্ষা

বাইবেল পাঠ ও ব্যাখ্যা

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - খ্রিষ্টধর্ম শিক্ষা - অঞ্জলি ২ | NCTB BOOK

উপহার ২৪-২৫

বাইবেল পাঠ ও ব্যাখ্যা

 

বিবাহ ও পরিবার

প্রিয় শিক্ষার্থী, এ সেশনে তোমরা পবিত্র বাইবেল ও শিক্ষকের কাছ থেকে বিবাহ ও পরিবার সম্পর্কে জানবে। তোমরা শিক্ষক ও সহপাঠীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করো। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসারে নিচের গানটি অথবা সমতুল্য একটি গান করো।

আবার গাও, মিষ্টি স্বরে গাও

১। আবার গাও, মিষ্টি স্বরে গাও

জীবনদায়ী বাক্য!

তাহা আমায় আরও শিখাও

জীবনদায়ী বাক্য!

ঈশ্বরের ঐ উক্তি

শিখায় বিশ্বাস, ভক্তি।

 

ধূয়া- সুন্দর বাক্য, মধুর বাক্য।

জীবনদায়ী বাক্য।

 

২। খ্রীষ্ট যীশু দেন মানব সবে, 

জীবনদায়ী বাক্য,

ও ভাই শুন প্রেমের রবে, 

জীবনদায়ী বাক্য,

দত্ত বিনা দামে, 

লওয়ায় স্বর্গধামে।

 

৩। কিবা শুভ সংবাদ ধ্বনি 

জীবনদায়ী বাক্য; 

ক্ষমা শান্তি তাহে শুনি, 

জীবনদায়ী বাক্য; 

যীশু জীবনদাতা, 

যীশু পরিত্রাতা।

খ্রীষ্ট সঙ্গীত ১৫৬                                                                                                                              

গানের Link: http://youtu.be/IN7CcKvJ2-A?feature=shared

 

ঈশ্বরের সাদৃশ্যে মনুষ্য সৃষ্টি

আদিপুস্তক ১:২৭-২৮

পরে ঈশ্বর তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন। হ্যাঁ, তিনি তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন, সৃষ্টি করলেন পুরুষ ও স্ত্রীলোক করে। ঈশ্বর তাঁদের আশীর্বাদ করে বললেন, "তোমরা বংশবৃদ্ধির ক্ষমতায় পূর্ণ হও, আর নিজেদের সংখ্যা বাড়িয়ে পৃথিবী ভরে তোলো এবং পৃথিবীকে নিজেদের শাসনের অধীনে আন। এছাড়া তোমরা সমুদ্রের মাছ, আকাশের পাখী এবং মাটির উপর ঘুরে বেড়ানো প্রত্যেকটি জীবন্ত প্রাণীর উপরে রাজত্ব কর।"

 

তোমাকে সহজ করে বলি

ঈশ্বর সকল মানুষের স্রষ্টা। তিনি সকল মানুষকে তাঁর সম্প্রদানযোগ্য গুণাবলি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যেন সকল মানুষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ স্থাপিত হয়। সসীম গুণাবলির দিক থেকে মানুষ ঈশ্বরের সাদৃশ্য বা প্রতিমূর্তি। কিন্তু অপ্রদান বা অসীম গুণাবলির দিক থেকে ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টি থেকে আলাদা। তিনি মানুষকে পুরুষ ও নারী করে সৃষ্টি করেছেন। পুরুষ ও নারীর মধ্যে বিবাহের পরিকল্পনা তিনিই করেছেন। ঈশ্বরের ইচ্ছা এই, একজন পুরুষ ও নারী উপযুক্ত বয়সে বিবাহ করে যেন পরিবার গঠন করেন।

বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর প্রতি ঈশ্বরের প্রথম আশীর্বাদ হলো তারা যেন সন্তান জন্ম দিয়ে বংশবৃদ্ধি করে পৃথিবী পূর্ণ করে। দ্বিতীয় আশীর্বাদ হলো, বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে পৃথিবী পূর্ণ করে সবকিছুর যত্ন ও তত্ত্বাবধান করে। তাই উপযুক্ত বয়সে বিবাহের মাধ্যমে পরিবার গঠন করে সন্তান জন্ম দেওয়া, ঈশ্বরের উদ্দেশে লালনপালন করে বড়ো করে তোলা এবং সৃষ্টি দেখাশুনা করা ঈশ্বরেরই দেওয়া পবিত্র দায়িত্ব।

 

 

নারী-পুরুষ পরস্পরের জীবনসঙ্গী হওয়ার জন্যই সৃষ্টি

আদিপুস্তক ২: ১৮-২৩

 

পরে সদাপ্রভু ঈশ্বর বললেন, "মানুষটির পক্ষে একা থাকা ভাল নয়। আমি তার জন্য একজন উপযুক্ত সংগী তৈরি করব।" সদাপ্রভু ঈশ্বর মাটি থেকে ভূমির যে সব জীবজন্তু ও আকাশের পাখী তৈরি করেছিলেন সেগুলো সেই মানুষটির কাছে আনলেন। সদাপ্রভু দেখতে চাইলেন তিনি সেগুলোকে কি বলে ডাকেন। তিনি সেই সব জীবন্ত প্রাণীগুলোর যেটিকে যে নামে ডাকলেন সেটির সেই নামই হল। তিনি প্রত্যেকটি গৃহপালিত ও বন্য পশু এবং আকাশের পাখীর নাম দিলেন, কিন্তু সেগুলোর মধ্যে সেই পুরুষ মানুষটির, অর্থাৎ সৃষ্টির প্রথমেই আদমের কোন উপযুক্ত সংগী দেখা গেল না। সেইজন্য সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমের উপর একটা গভীর ঘুম নিয়ে আসলেন, আর তাতে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। তখন তিনি তাঁর একটা পাঁজর তুলে নিয়ে সেই জায়গাটা বন্ধ করে দিলেন। আদম থেকে তুলে নেওয়া সেই পাঁজরটা দিয়ে সদাপ্রভু ঈশ্বর একজন স্ত্রীলোক তৈরি করে তাঁকে আদমের কাছে নিয়ে গেলেন। তাঁকে দেখে আদম বললেন, "এবার হয়েছে। এঁর হাড়-মাংস আমার হাড়-মাংস থেকেই তৈরি। পুরুষ লোকের দেহের মধ্য থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে এঁকে স্ত্রীলোক বলা হবে।"

তোমাকে সহজ করে বলি

 

মানুষ সামাজিক জীব। সে একা থাকতে পারে না। তার উপযুক্ত জীবনসঙ্গী দরকার। পুরুষের উপযুক্ত জীবনসঙ্গী কেবল স্ত্রীলোকই হতে পারে। একইভাবে একজন স্ত্রীলোকের জীবনসঙ্গী কেবল পুরুষলোকই হতে পারে। সৃষ্টির প্রথমেই ঈশ্বরের সৃষ্ট সমস্ত প্রাণী আদমের কাছে আনা হয়েছিল যেন তিনি সেগুলোর নাম রেখে তাদের মধ্য থেকে নিজের জন্য উপযুক্ত জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতে পারেন। কিন্তু কোনো প্রাণীর মধ্যেই নিজের জন্য জীবন সঙ্গী খুঁজে পেলেন না। এজন্য ঈশ্বর আদমকে গভীরভাবে ঘুম পাড়িয়ে তাঁর একটি পাঁজর নিয়ে একজন স্ত্রীলোক তৈরি করলেন তাঁর জীবনসঙ্গী হওয়ার জন্য। এই গভীর ঘুমকে বর্তমানে আমরা ঈশ্বরের কাছে গভীর প্রার্থনা ও নির্ভরতাকে বোঝাতে পারি। আদম আনন্দিত হয়ে খুশিতে তাঁর নাম দিলেন 'স্ত্রীলোক'। পুরুষ মানুষের দেহ থেকে তৈরি হওয়ার জন্য 'স্ত্রীলোক' নামটি দেয়া হয়েছে। মানুষের হাড়, মাংস, রক্ত, বুদ্ধিমত্তা, আবেগ-অনুভূতি ও দায়িত্ববোধে একটি সুন্দর মিল আছে। এ মিল মানুষের সঙ্গে অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে পাওয়া যায় না। পুরুষ মানুষের উপযুক্ত জীবনসঙ্গী কেবল নারীই হবে, এটাই মানুষের জন্য ঈশ্বরের পরিকল্পনা। একজন পুরুষ/ স্ত্রীলোক উপযুক্ত বয়সে বিবাহ করে পরিবার গঠন করবে এবং সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখবে।

 

বিবাহ বিচ্ছেদ বিষয়ে যীশুর শিক্ষা

মার্ক ১০:১-১২

পরে যীশু সেই জায়গা ছেড়ে যিহুদিয়া প্রদেশে এবং যদন নদীর অন্য পারে গেলেন। অনেক লোক আবার তাঁর কাছে এসে জড়ো হল। তখন তিনি তাঁর নিয়ম মতই লোকদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। এই সময় কয়েকজন ফরীশী এসে যীশুকে পরীক্ষা করবার জন্য বললেন, "মোশির আইন-কানুন মতে স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া কি কারও পক্ষে উচিত?” যীশু তাঁদের বললেন, "মোশি আপনাদের কি আদেশ দিয়েছেন?" তাঁরা বললেন, "তিনি ত্যাগপত্র লিখে স্ত্রীকে ছেড়ে দেবার অনুমতি দিয়েছেন" যীশু বললেন "আপনাদের মন কঠিন বলেই মোশি এই আদেশ লিখেছিলেন। কিন্তু এ-ও লেখা আছে যে, সৃষ্টির আরম্ভে 'ঈশ্বর তাদের পুরুষ ও স্ত্রীলোক করে সৃষ্টি করেছিলেন। এইজন্যই মানুষ মা-বাবাকে ছেড়ে তার স্ত্রীর সংগে এক হয়ে থাকবে, আর তারা দু'জন একদেহ হবে।' সেইজন্য তারা আর দুই নয়, কিন্তু একদেহ। তাহলে ঈশ্বর যা একসঙ্গে যোগ করেছেন মানুষ তা আলাদা না করুক।"

 

তোমাকে সহজ করে বলি

মোশির সময়ে লোকদের অন্তর খুব কঠিন ছিলো। তারা ঈশ্বরের অবাধ্য ছিলেন। লোকেরা ছোট ছোট কারণে মৌখিক ঘোষণার মাধ্যমে সহজেই স্ত্রীদেরকে পরিত্যাগ করতেন। স্ত্রী পরিত্যাগ বিষয়টি সহজ হওয়ার কারণে সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদ বৃদ্ধি পেয়েছিল। বিচ্ছেদের পর অনেক স্ত্রীলোকের জীবন কঠিন হয়ে উঠেছিলো। ঐ প্রেক্ষাপটে স্ত্রী পরিত্যাগের হার কমানোর জন্য মোশি লিখিতভাবে পরিত্যাগের নিয়ম দিয়েছিলেন। কিন্তু সৃষ্টির শুরুতে এমন নিয়ম ছিল না। ঈশ্বর সৃষ্টির প্রথম থেকেই মানুষকে পুরুষ ও স্ত্রীলোক করে সৃষ্টি করেছিলেন যেন তারা সারা জীবন স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসঙ্গে থাকেন। এজন্যই মানুষ মা-বাবাকে ছেড়ে একটি নতুন পরিবার গঠন করে একসঙ্গে থাকবে।

ঈশ্বর বিবাহোত্তর শান্তিপূর্ণ বৈবাহিক জীবনকে গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, 'ঈশ্বর যা একসঙ্গে যোগ করেছেন মানুষ যেন তা আলাদা না করে।' পবিত্র শাস্ত্রে যীশু আরও বলেছেন যে, যদি কোনো স্বামী নিজের স্ত্রীকে ছেড়ে অন্য স্ত্রীকে বিয়ে করে তাহলে সে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যভিচার করে। একইভাবে যদি কোনো স্ত্রীলোক তার স্বামীকে ত্যাগ করে অন্য পুরুষকে বিয়ে করে তবে সেও ব্যভিচার করে। পবিত্র বাইবেল বিবাহ বিচ্ছেদকে নিরুৎসাহিত করেছে। এজন্য বিবাহ বিচ্ছেদকে আমাদের 'না' বলা দরকার এবং বিবাহিত নারী-পুরুষকে ঈশ্বরের বাক্যের বাধ্যতায় জীবনযাপন করা দরকার।

প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমরা এখন নিচের লিংকের ভিডিওটি দেখবে। তবে শিক্ষক তোমাদের সমতুল্য একটি ভিডিও দেখাতে পারেন। খ্রীষ্টিয়ান বিবাহের এই ভিডিওটিতে কী কী রীতিনীতি অনুসরণ করা হয়েছে সেগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখো। এ বিষয়ে একটি ভিডিও লিংক সংযুক্ত করা হলো।

https://www.youtube.com/watch?v=FBUXE6WmVE4

 

 

খ্রীষ্টিয় বিবাহের ধর্মীয় বিধিবিধানের তালিকা তৈরি

 

প্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসারে চারটি দলে ভাগ হও। প্রত্যেকটি দলে একজন দলনেতা নির্বাচন করো। তোমরা দলগতভাবে বাইবেলের শিক্ষার আলোকে এবং ভিডিও দেখে খ্রীষ্টিয়ান বিয়ে সম্পর্কে যে সকল ধর্মীয় বিধিবিধান সম্বন্ধে জেনেছ তার একটি তালিকা তৈরি করে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করো। শিক্ষকের দেওয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি করো।

ক্রমিক নং

খ্রীষ্টিয় বিবাহের বিধিবিধান

১.

 

২.

 

৩.

 

8.

 

৫.

 

Content added || updated By
Promotion